,

উন্নয়নেই বিশাল বিজয়: প্রধানমন্ত্রী

বিডিনিউজ ১০ ডেস্ক: আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিগত ১০ বছরে আওয়ামী লীগ ব্যাপক উন্নয়ন করেছে বলেই জনগণ বিপুল ভোটে বিজয়ী করেছে। দেশের জনগণ হল প্রধান বিচারক। তারা ভালো-মন্দ বিচার করেই আমাকে ভোট দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। কোনো অনিয়ম হলে ইসি নির্বাচন বন্ধ করে দিত। নতুন সরকারের আমলে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং মানুষের কল্যাণই অগ্রাধিকার পাবে। তিনি বলেন, বিএনপি মনোনয়ন বাণিজ্য করেছে, যুদ্ধাপরাধীদের মনোনয়ন দিয়েছে সেজন্য মানুষ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে।

সোমবার সন্ধ্যায় গণভবনে বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকরা নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দেন শেখ হাসিনা। বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ভিসা জটিলতা, সক্রিয় বিরোধী দলের অভাব ও রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রসঙ্গ নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা রয়েছে। সবাই রাজনৈতিক চর্চা করবে। কিন্তু আমরা সহিংসতা ও পেট্রলবোমার রাজনীতি সমর্থন করব না। এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, সংসদে সক্রিয় বিরোধী দল না থাকায় কি আপনি চিন্তিত? আপনি কি শঙ্কিত যে, আরও সহিংসতা হতে পারে। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সহিংসতা ঠেকাতে যে কোনো পদক্ষেপ নেব।

আলজাজিরার এক প্রতিবেদক বলেন, এবার বিদেশি পর্যবেক্ষকের সংখ্যা অনেক কম। ভিসা জটিলতায় অনেকেই আসতে পারেননি। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের অনেকেই রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তাই তাদের আসার ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়নি। এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে আনফ্রেলের নির্বাচন পর্যবেক্ষণমূলক প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়।’

আলজাজিরার ওই সাংবাদিক আবারও প্রশ্ন করেন, বাংলাদেশে অনেকদিন ধরেই সরকারের একচ্ছত্র আধিপত্যে সহিংসতা হয়ে আসছে। আপনি কি সেই পরিস্থিতির পরিবর্তন আনবেন? জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনি অতীতের নির্বাচনগুলোর ইতিহাস দেখলে জানতে পারবেন, ২০০১ সালে তৎকালীন ক্ষমতাসীন জোট বিএনপি-জামায়াত কীভাবে আমাদের ওপর চড়াও হয়েছিল। আমাদের এই বিষয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। কিন্তু আমরা তেমনটা করি না। ক্ষমতাসীন দল কিংবা বিরোধী দল স্বাধীন। বিরোধী দল নির্বাচনে জিততেই পারে। কিন্তু আমাদের নেতাকর্মীরা তাদের কোনো ধরনের হয়রানি করেননি। বরং বিরোধী দলের হামলায় আমাদের প্রায় ২০ জন নেতাকর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। আমি তাদের নির্বাচনে আসার আহ্বান জানিয়েছি, সংলাপ করেছি। আমি অনেক সময় ব্যয় করেছি, যেন তারা নির্বাচনে অংশ নেয়। আমরা তাদের ওপর চড়াও হতে চাই না। আমরা দেশের উন্নতি চাই।’

এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, নির্বাচনে ইন্টারনেট গতি কেন কমিয়ে দেয়া হয়েছিল। আমাদের গতিশীল ইন্টারনেট প্রয়োজন। কিন্তু নির্বাচনের সময় আমরা প্রযুক্তিগত সেই সুবিধা পাইনি। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইন্টারনেট বেশি ব্যবহারের কারণে গতি কমে গিয়েছিল।’

রয়টার্সের এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, নির্বাচন কমিশনের মুখপাত্র বলেছেন, অনেক স্থানেই ভোট বানচালের চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা কি আশা করতে পারি, নির্বাচন কমিশন কিংবা সরকার এই ঘটনার তদন্ত করবে? জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অবশ্যই তারা করতে পারে। তারা অতীতেও এমন তদন্ত করেছে। তারা সম্পূর্ণ স্বাধীন ও নিরপেক্ষ সংস্থা।’ রোহিঙ্গাদের নিয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশ হিসেবে আমরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। তারা শরণার্থীদের যাতে ফিরিয়ে নেয় সেজন্য মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আমরা অনুরোধ করব, তারা যেন এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়।’

নিজেদের কারণেই ৭টি আসন পেয়েছে ঐক্যফ্রন্ট : বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শোচনীয় পরাজয়ের কারণগুলো বিদেশি সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বিএনপি নিজেদের কারণে এবারের নির্বাচনে সাতটি আসন পেয়েছে। নির্বাচন হলে মানুষ চিন্তা করে কে প্রধানমন্ত্রী হবেন। কিন্তু ঐক্যফ্রন্ট কাউকে সেভাবে জাতির সামনে দেখাতে পারেনি। ফলে তারা ওইভাবে ভোটারদের আকর্ষণও করতে পারেনি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের দিকে তাকালে আপনারা দেখবেন- কংগ্রেসও গত নির্বাচনের আগে দেখাতে পারেনি তাদের প্রধান কে হবেন। তারা মানুষকে ওইভাবে আকৃষ্ট করতে পারেনি। ঐক্যফ্রন্টের ক্ষেত্রেও তাই-ই হয়েছে।

ভোটে বিএনপির পরাজয়ের কারণগুলো তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপি তাদের জোটে মানবতাবিরোধীদের নমিনেশন দিয়েছে। একাত্তরে মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সেই দলের ২৫ জনকে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট মনোনয়ন দিয়েছে। এজন্য তাদের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির মূল লিডাররা দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের দায়ে অভিযুক্ত এবং আদালতের রায়ে অভিযুক্ত। তাদের একজন কারাগারে ও অন্যজন পলাতক। সুতরাং তাদের মূল নেতৃত্বের অভাব ছিল। পরাজয়ের এটিও একটি কারণ।

মনোনয়নের ক্ষেত্রে বিএনপির অব্যবস্থাপনার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি ব্যাপক মনোনয়ন বাণিজ্য করেছে। যে তাদের বেশি টাকা দিয়েছে তাকেই নমিনেশন দিয়েছে। তারা যোগ্য ব্যক্তিদের মনোনয়ন দেয়নি। তিনি বলেন, ‘একেকটা আসনে তিনজন, চারজন এমনকি পাঁচজনকেও নমিনেশন দিয়েছে। এতে কেউ আর সেভাবে মাঠে কাজ করেনি। কে কী করবে, না করবে তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে কেউ কাজ করেনি।

তিনি বলেন, আইনজীবী হিসেবে কামাল হোসেন খুবই ভালো। কিন্তু তিনি যখন তার দল গণফোরাম প্রতিষ্ঠা করেন তখন থেকেই নির্বাচন পরিচালনা করার ভালো অভিজ্ঞতা নেই, জেতারও কোনো অভিজ্ঞতা নেই।

নির্বাচনে পরাজয়ের কারণ হিসেবে বিএনপি আমলে দুর্নীতির কথাও তুলেন ধরেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তিনি বলেন, বিএনপি আমলে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, ৬৩ জেলায় একযোগে সিরিজ বোমা হামলা ইত্যাদি কারণে মানুষ তাদের রিজেক্ট করেছে। তিনি বলেন, আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি- তারা (বিএনপি-জামায়াত ও ঐক্যফ্রন্ট) নির্বাচন নিয়ে কোনো কাজ করেনি। কয়েকজনের তৎপরতা লক্ষ্য করা গেলেও অনেকেই অ্যাক্টিভিটি না করে প্রোপাগান্ডা ছাড়া সে রকম কিছু করেনি। মতবিনিময় সভায় আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচটি ইমাম, প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর